literature and its cinema

সেলুলয়েডে বঙ্কিমচন্দ্র

রূপবতী প্রফুল্ল অভাগিনী অতি কষ্টে দিন চলে। জমিদার হরবল্লভ বাবু তাঁর একমাত্র পুত্র ব্রজেশ্বরের সঙ্গে রূপবতী প্রফুল্লের বিয়ে দিতে সম্মত হন। বরযাত্রীদের ভালো-মন্দ আর কন্যাযাত্রীদের জন্য চিড়ে দই গ্রামের ব্রাহ্মণেরা গোলমাল করে উঠে যায়। হরবল্লভকে তারা জানায় যে প্রফুল্লর মা কুলটা। হরবল্লভ সে কথা বিশ্বাস করে পরের দিন প্রফুল্লকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন এবং পুত্রের অন্যত্র বিয়ে দেন। এই অন্যায় সহ্য করতে না পেরে প্রফুল্ল মাকে নিয়ে হাজির হন শ্বশুরবাড়িতে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। শ্বশুর তাড়িয়ে দেন কিন্তু শাশুড়ি রাত্রিবাসের অনুমতি দেন প্রফুল্লকেব্রজেশ্বরের সঙ্গে প্রফুল্ল রাত্রিবাস করেন কিন্তু একাকী প্রফুল্লকে ফিরতে হয় নিজের গাঁয়ে সেখানে দেখেন মা মারা গেছেন ভোরবেলায় প্রফুল্ল জঙ্গলের কাছে একটি ভাঙা বাড়িতে মুমূর্ষু বৈষ্ণবের সাক্ষাৎ পান বৈষ্ণব তার যথাসর্বস্ব কুড়ি ঘড়া মোহর দিয়ে মারা যান। সেই মোহর ভাঙাতে গিয়ে প্রফুল্ল সাক্ষাৎ পান ডাকাত সরদার ভবানী পাঠকের। যিনি প্রফুল্লকে দীক্ষা দেন দেশব্রতে পাঁচ বছরের শিক্ষান্তে প্রফুল্ল হয়ে উঠলেন দেবী চৌধুরানী। 

Devi Chowdhurani

পাঠকেরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কোন উপন্যাসের কথা বলছিলাম। ঠিকই ধরেছেন। ‘দেবী চৌধুরানী’বঙ্কিমচন্দ্রের কাহিনি অবলম্বনে সেই দেবী চৌধুরানী চিত্ররূপ দিতে এগিয়ে এলেন পরিচালক দীনেন গুপ্ত। তিনি একই সঙ্গে প্রযোজক পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক নাম ভূমিকার শিল্পী বিশ্ববন্দিত সুচিত্রা সেন প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এই কাহিনি নিয়ে এবং সুচিত্রা সেনকে নাম ভূমিকায় রেখে প্রযোজক আর ডি বনসলের হয়ে সত্যজিৎ রায় এই ছবিটি করতে নেমেছিলেন তবে তিনি সুচিত্রা সেনকে এক শর্ত দিয়েছিলেন যতদিন সুচিত্রা সেন এই ছবিটাতে কাজ করবেন ততদিন তিনি অন্য ছবিতে কাজ করতে পারবেন না সেটি সুচিত্রা সেনের পক্ষে মানা সম্ভব হয়নি বলে অভিনেতা সুচিত্রা আর পরিচালক সত্যজিৎ জুটির দেবী চৌধুরানী নির্মিত হয়নি।

৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় দীনেন গুপ্ত দেবী চৌধুরানী’র কাহিনি নিয়ে ছবি করলেন নাম ভূমিকায় সুচিত্রা সেন। ব্রজেশ্বরের চরিত্র রঞ্জিত মল্লিক অন্যান্য ভূমিকায় বসন্ত চৌধুরী, কালী বন্দোপাধ্যায়, ছায়াদেবী, শেখর চট্টোপাধ্যায়। আজকের ভাষায় সুপারহিট ছবি দেবী চৌধুরানী এই নিয়ে আরও একবার দেবী চৌধুরানী নির্মিত হয়েছিল।পরিচালক সতীশ দাশগুপ্ত নাম ভূমিকায় সুমিত্রা দেবী। আর ছিলেন ছবি বিশ্বাস ও প্রদীপ কুমার।

রজনীযখন দ্বিতীয়বারের জন্য নির্মিত হচ্ছে তখন তার নামকরণ করা হয়েছিল সমর। মূল উপন্যাসের যিনি নায়ক, অমরনাথ, তাঁকে কেন্দ্র করে এই কাহিনি ছবিটি নির্মিত। নাম ভূমিকায় অশোক কুমার। পরিচালক নীতিন বসু। চিত্রনাট্য সংলাপ রচনা করেছিলেন ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক সজনীকান্ত দাস। লবঙ্গলতার চরিত্রে সুমিত্রা দেবী। ১৯৫০ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। 

১৯৩২ সালে তখন সবাক চিত্রের শুরু। প্রথম যে ছবিটি উঠে এসেছে তাঁর কাহিনি থেকে, সেটি হল ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’পরিচালক জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ম্যাডাম থিয়েটারের ব্যানারে নির্মিত এই ছবিতে অভিনয় করলেন অহীন্দ্র চৌধুরী, নির্মলেন্দু লাহিড়ির মতো বিরাট শিল্পীরা। দ্বিতীয়বার নির্মাণ করতে এগিয়ে এলেন পরিচালক খগেন রায়। এবারের শিল্পী তালিকায় ছিলেন ছবি বিশ্বাস, সন্ধ্যারানী, শিপ্রা মিত্র, কমল মিত্রতৃতীয়বার কৃষ্ণকান্তের উইল করতে এগিয়ে এলে পরিচালক রাজা সেন জিৎ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, কুনাল মিত্র অভিনীত সেই ছবি।

একটা সময় গেছে যখন বঙ্কিমচন্দ্রের এক একটা কাহিনির বারক’য়েক করে চিত্ররূপ দেওয়া হয়েছে। দেবী চৌধুরানী ও কৃষ্ণকান্তের উইল কথা বলা হলএছাড়া কপালকুণ্ডলা, বিষবৃক্ষ নির্মিত হয়েছে তিনবার। ইন্দিরা নির্মিত হয়েছে দুবার রজনী নির্মিত হয়েছে চারবার।। চন্দ্রশেখর, দুর্গেশনন্দিনী, আনন্দমঠ একবার করেই নির্মিত হয়েছিল। 

রজনী যখন দ্বিতীয়বারের জন্য নির্মিত হচ্ছে তখন তার নামকরণ করা হয়েছিল সমর। মূল উপন্যাসের যিনি নায়ক, অমরনাথ, তাঁকে কেন্দ্র করে এই কাহিনি ছবিটি নির্মিত নাম ভূমিকায় অশোক কুমার পরিচালক নীতিন বসু। চিত্রনাট্য সংলাপ রচনা করেছিলেন ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক সজনীকান্ত দাস। লবঙ্গলতার চরিত্রে সুমিত্রা দেবী। ১৯৫০ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। 

দীনেন গুপ্ত যখন রজনী নির্মাণ করলেন তখন তাঁর নিজের মেয়ে সোনালী গুপ্তকে নিয়ে এসেছিলেন নাম ভূমিকায়। আর অভিনয় করেছেন রঞ্জিত মল্লিক, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে প্রমুখ শিল্পী। দেবকী কুমার বসু চন্দ্রশেখর উপন্যাসের চিত্ররূপ দিয়েছিলেন সেখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ছবি বিশ্বাস। প্রতাপের ভূমিকায় অশোক কুমার শৈবলিনী চরিত্রে কানন দেবী দলনী বেগমের চরিত্রে ভারতী দেবী। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনীর চিত্ররূপ দেন পরিচালক অমর মল্লিক সেখানে অভিনয় করেছেন চন্দ্রাবতী দেবী, ছবি বিশ্বাস, ভারতী দেবী, কমল মিত্র প্রমুখ শিল্পী। আনন্দমঠের মতো সাড়া জাগানো উপন্যাসের চিত্ররূপ দিলেন পরিচালক সতীশ দাশগুপ্ত বন্দেমাতারাম গানে সমৃদ্ধ এই ছবির সুরকার হলেন সুবল দাশগুপ্ত। বিভিন্ন ভূমিকায় রূপদান করেছিলেন অনুভা গুপ্তা, সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়, অহীন্দ্র চৌধুরী, কমল মিত্র প্রমুখ শিল্পী। 

আশির দশকে অভিনেত্রী মহুয়া রায়চৌধুরী রাধারানী ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করলেন বিপরীতে ছিলেন বিশ্বজিৎ কিন্তু দুর্বল চিত্রনাট্য যে ছবিকে কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত করে তার নিদর্শন এই রাধারাণী। অপর্ণা সেনকে আমরা দুবার পেয়েছি দুটি বঙ্কিম উপন্যাসের চিত্ররূপে তার প্রথমটি হল বিষবৃক্ষ পরিচালক অজয় করঅপর্ণা সেন, রঞ্জিত মল্লিক, দেবশ্রী রায়, লিলি চক্রবর্তী ছিলেন অভিনয়ে। দ্বিতীয় বঙ্কিম কাহিনির চিত্ররূপে অপর্ণা ছিলেন ইন্দিরা ছবিতে। পরিচালক দীনেন গুপ্ত। সেখানে রূপদান করলেন অপর্ণা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরী, উৎপল দত্ত অনুপ কুমার প্রমুখ শিল্পী।

‘কৃষ্ণকান্তের উইল’-এর চিত্ররূপ অবশ্য রাজা সেন জমাতে পারেননি, ঠিক তেমনি ‘আমি লবঙ্গলতা’ নামে রজনী উপন্যাসের চিত্ররূপেও লবঙ্গতার ভূমিকায় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এসেও জমাতে পারলেন না। ‘দেবী চৌধুরানী’ রিমেক হয়েছে। সেটিও আসতে চলেছে সেখানে নাম ভূমিকায় শ্রাবন্তী এবং ভবানী পাঠকের চরিত্রে রয়েছেন প্রসেনজিৎ। দেখা যাক সেই ছবির ভাগ্যে কী লেখা রয়েছে